কনজ্যুমার সেলার বিহেভিয়ার

ভোক্তার অভ্যাস আচরণের উপর ভিত্তি করে মার্কেটিং স্ট্রাটেজি করা হয়। কনজ্যুমার বিহেভিয়ার অত্যন্ত জটিল একটি ব্যাপার যদিও অনেকে মনে করেন এটা খুব সোজা। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো কোটি কোটি ডলার খরচ করে এর পেছনে। যাইহোক কেতাবী ফিরিস্তি বাদ দিয়ে আসুন এবার কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করি।

অফলাইন-অনলাইনে ভোক্তারা আজকাল “ডিসকাউন্ট সীকার”। অনেক ক্ষেত্রে যদিও ভোক্তারা জানেন বিক্রেতারা তাদের পন্যের দাম ডাবল করে ৫০% ডিসকাউন্ট দিচ্ছে তবুও তারা জেনে শুনেই কিনেন, ডিসকাউন্ট এর মানসিক তৃপ্তির জন্য। আবার ১২ মাসের ১৩ পার্বণের মত আছে ফাটাফাটি অফারের ফাটানো বিজ্ঞাপন,৮০% পর্যন্ত ছাড়। এটা সত্যিই অবাক করা ব্যপার যদি দাম না বাড়িয়ে আসলেই বিক্রয়মূল্যের উপর ৮০% ছাড় দেয়া হয়, তবে একটি প্রোডাক্ট এর প্রফিট মার্জিন কত?

এটা বোঝার জন্য জটিল সমীকরনের প্রয়োজন হয় না। তবুও আমরা কেন যেন একটি কিনলে আরেকটি ফ্রী, একটি কিনলে ২টি ফ্রী বা হাজারো অফারের ভিড়ে চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে যাচ্ছি। কোন ব্যবসায়ী নিঃসন্দেহে লস দিয়ে ব্যবসা করেন না। [ দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া]

আমরা ক্রেতারা আসলে সবই বুঝি। আমরা নিতে চাই অনেক, কিন্তু দিতে চাই না। সব কিছুতেই যত কমে কেনা যায় কেনো, যত বেশী লাভ করা যায় কর। আমরা নিজেরা একাই জিততে চাই। কেউ কিনে কেউ বা বিক্রি করে। এর মাঝে জেতার যে অসুস্থ প্রতিযগিতা তা আস্তে আস্তে আমদের এ দেশকে পরিনিত করেছে চায়নার সব থেকে বাজে মালের সবচেয়ে ভাল বাজারে। (ডাম্পিং মার্কেট)

দুধ কিনবে তাও কম দামে, ক্রেতা স্বার্থ। বিক্রেতাও কম জানে না, সামান্য একটু পানি মিশিয়ে কম দামে দিলেন টাটকা দুধ। ক্রেতা খুশি-বিক্রেতাও খুশি। আর এই অশ্লীল খুশির জোয়ারে  ভেসে যাচ্ছে আমাদের নিজেদের স্বাস্থ্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। প্রতিটি জায়গায় ভেজাল আর ভেজাল। এজন্য শুধু অসাধু ব্যাবসায়ীরা একা দায়ী না, আমাদের ক্রেতাদের মানসিকতাও অনেকাংশে দায়ী, আমাদের সবচেয়ে কম দামে সব থেকে ভালোটা কেনার যে অসামাঞ্জস্য প্রতিযোগিতা, তার সাথে ব্যাবসায়ীরাও তাল মিলিয়ে তাদের পসরা সাজিয়ে ফেরি করছেন পন্য। আরো একটু ( বেশী চালাক) দিচ্ছেন নিম্নমানের পন্য, ভেজাল পন্য।

আবার, একটা সমাজে সবাই ক্রেতা ও বিক্রেতা। সবাই চায় যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ লাভ। কত কমে কত বেশী নেয়া যায়। এই অসুস্থ মানসিকতা, আর এজন্যই ভেজাল ভেজালে সয়লাভ আজ গোটা দেশ। ঢাকা শহরে ১ কেজি খাঁটি গরুর দুধও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।বিশ্বাস উঠে গেছে প্রায় সমস্ত জায়গায় । আমাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক অবক্ষয়ের চাপে শেষ হয়ে যাচ্ছে কোটি মানুষ,আমাদের সন্তানেরা।